Sunday, October 14, 2012

                                                             লালসালু উপন্যাসের নামকরণ
নামকরণ সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাধারণত বিষয়বস্তু, মূল বক্তব্য, কেন্দ্রীয় চরিত্র, অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ইত্যাদি নামকরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লালসালূ একটি বিখ্যাত উপন্যাস। এই উপন্যাসের নামকরলের ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর অন্তনিহিত তাৎপর্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
      
লালসালূ হচ্ছে লাল রঙের কাপড়। এমনিতে লাল কাপড়ের তেমন কোনো মহিমা নেই। তবে এটি খুব উজ্জ্বল রং হওয়ায় একে বিশেষ উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো যায়। বাংলাদেশের এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী যুগ-যুগ ধরে লাল রংটিকে সফলভাবে কাজে লাগিয়ে আসছে। কবরের উপর লাল কাপড় বিছিয়ে দিলে কবরের গুরুত্ব অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। তখন তা আর সাধারণ কবরে সীমাবদ্ধ থাকে না_মাজারে পরিণত হয়। কবরটি তখন মানুষের ভক্তিপ্রীতির আকর্ষণ হয়ে দাড়ায়। এ ধরনের কবরে মানুষ প্রতিনিয়ত ভিড় জমায়, জেয়ারত করে, দোয়া দরুদ পড়ে এবং শিরনি দেয়। টাকা পয়সা দেয়। এভাবে মাজারটি হয়ে দাড়ায় পরলোক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। এই মাজার বাংলাদেশের লোকজীবনে অসামান্য প্রভাব ফেলে। এখানেই ‌লালসালু নামকরণের তৎপর্য ইঙ্গিতময় হয়ে ওঠে। এর সাথে পীর-ফকিরদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।
      
 বাংলাদেশের মানুষ ধর্মের প্রতি দুর্বল। এক সময় এদেশে পীর-ফকিরদের আধিপত্য ছিল। বর্তমানে সেরকম আধিপত্য না থাকলেও পীরভক্তি একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। খানকা শরিফ, দরগা, মাজার এদেশের বিশাল লোকজীবনে অশিক্ষা, অজ্ঞানতা আর কুসংস্কার জমাট বেধে আছে। পীর-ফকিরদের প্রতি ভক্তি-বিশ্বাসের মূল আছে অশিক্ষা আর কুসংস্কার। মানুষের ধারণা, পীর-ফকিরেরা আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলীয়ান, সৃষ্টিকর্তার নৈকট্যে তারা আছে, কাজেই তাদের মুরিদ হয়ে তাদের সেবাযত্ন করতে পারলে পাপ থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব হবে। এসব কারলে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। এই দুর্বলতাকে পুজি করে ভণ্ড ধার্মিকেরা ধর্মব্যবসায়ে নেমে পড়ে। তাদের কর্মতপরতার মধ্যে রয়েছে কবরকে কারুকার্যমণ্ডিত ঝালরওয়ালা লাল রঙের কাপড়ে আব্রত করে মাজারে পরিণত করা এবং তার মধ্যে দিয়ে দুনিয়াদারি হাসিল করা। বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে সর্বত্র এ ধরনের ব্যবসার জমজমাট পরিবেশ দেখা যায়। এভাবে লালসালূ হয়ে পড়েছে ধর্মীয় কুসংস্কারের প্রতীক।