Tuesday, October 29, 2013

Friday, October 25, 2013

New Page 1

Mobile and Computer tips

 

 

 

 

Click it

Saturday, October 19, 2013

আজ বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে এলাম।

 মনটা একটু খারাপ লাগছে বটে! কিন্তু ভালোও লাগছে এই ভেবে যে একটা কাজ ভালোভাবে শেষ করতে পারলাম। বাবার প্রতি দায়িত্বও শেষ হলো। সংসারটা এবার নতুন করে গুছিয়ে নেব। বাবার ঘরটা গেস্টরুম বানাতে হবে। বাসায় একটা গেস্টরুম ছিল না বলে লুনার কত অভিযোগ—বাসায় গেস্ট এলে ওর নাকি মানসম্মান চলে যায়। ঠিকই তো বলেছে, গেস্টরুম একটা প্রয়োজন বৈকি! বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর বুদ্ধিটাও তার। আমারও যে মত ছিল না, তা নয়। বাবারও বোধ হয় এটাই ইচ্ছা ছিল। কারণ, তিনি আমাদের মতামতের কোনো বিরোধিতা করেননি। তা ছাড়া মায়ের মৃত্যুর পর বাবা খুবই নিঃসঙ্গ ছিলেন। আমি ও লুনা—দুজনই চাকরিজীবী, অফিসে যাই। বাবাকে কে সময় দেবে? ওখানে গিয়ে বাবা নিশ্চয়ই ভালো থাকবেন। সমবয়সী অনেককে পাবেন সঙ্গী হিসেবে। নাহ্, কাজটা ভালোই করেছি। আমার সব স্বপ্ন আমার পরিবারকে ঘিরে। লুনাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আমাদের দুজনের সংসারে অনাবিল আনন্দ বয়ে এনেছে আমাদের সোনার টুকরো ছেলে। তাকে পেয়ে আমার জীবনটা সত্যিই অন্য রকম হয়ে গেল। আমার সব মনোযোগ এখন স্ত্রী-পুত্রের দিকে। বাবা-মাকে দেখার সময় কই?

 যেদিন মা মারা গেলেন, সেদিন একটু অপরাধবোধ মনে জেগেছিল। মনে হয়েছিল, আমার অবহেলার জন্যই কি মা চলে গেলেন? মা স্ট্রোক করেছিলেন। হয়তো ভেতরে ভেতরে আরও অসুখ দানা বেঁধেছিল, কিন্তু মুখ ফুটে কখনো কাউকে কিছু বলেননি তিনি। মাকে দেখতে তো সুস্থই দেখাত, তাই কখনো তাঁকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি।

 বাবার বিষয়-সম্পত্তি তেমন ছিল না। তবে আমাদের একটা ছিমছাম একতলা বাড়ি ছিল। ছোটবেলা থেকে সেখানে বড় হয়েছি বলেই হয়তো বাড়িটা ভালোই মনে হতো। কিন্তু লুনা আধুনিক মেয়ে, ওর বাড়িটা পছন্দ হতো না মোটেই। বলত, পুরোনো, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। পরে ভেবে দেখলাম, কথাটা তো ও ভুল বলেনি! আমি তখন সবেমাত্র চাকরিতে ঢুকেছি। অন্যখানে বাসা নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য আমার হয়ে ওঠেনি। তাই লুনার পরামর্শে বাবাকে বোঝালাম, এই বাড়িটা জমিসহ বিক্রি করে দিলেই মোটামুটি হালফ্যাশনের একটা ফ্ল্যাট কিনেও কিছু টাকা ব্যাংকে রাখা যাবে। আমার বাবা এই প্রস্তাবে রাজি হননি। শেষে আমি রাগ করে লুনাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার হুমকি দিলাম, যদিও জানি, এ আমার সামর্থ্যের বাইরে। লুনা তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ সময় ওর বাড়তি কিছু যত্নআত্তি প্রয়োজন। এ অবস্থায় আমার সাহায্যে এগিয়ে এলেন মা। তিনি বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করালেন। অবশেষে বাবা রাজিও হলেন, কিন্তু আমার সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলতেন না আর। সেই থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেল আমার।

 নতুন ফ্ল্যাটটা বাবা-মা আমার নামে দিতে চাইলেন, কিন্তু আমার অনুরোধে বাবা ফ্ল্যাটটা তাঁর নাতির নামে উইল করে দেন। আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে এই কাজটি করেছিলাম। যেদিন নতুন ফ্ল্যাটে আমরা শিফট করলাম, সেদিন লুনার আনন্দ যেন বাঁধ মানছিল না। আমারও ভালো লাগছিল ওর হাসিমুখ দেখে। আমাদের ছেলের বয়স তখন চার বছর, ওকেও একটা আলাদা ঘর দেওয়া হলো। ছেলের ঘরটি ছবির মতো করে সাজাল লুনা। শুধু ছেলের ঘরই নয়, পুরো বাসাটাই সুন্দর করে সাজাল সে। ফ্ল্যাট কেনার পর যে টাকা বেঁচে ছিল, এর অনেকটাই ব্যয় করা হলো ঘর সাজানোর কাজে। শুধু বদলাল না বাবা-মায়ের ঘরটি—সেই আগেকার খাট, ঘুণে ধরা চেয়ার-টেবিল, আলমারি—ঠিক আগের বাড়ির ঘরটির মতো। এই ঘরটি সাজাতে দেননি মা। তিনি বলেছিলেন, থাকুক কিছু স্মৃতি। আমি কিছু মনে করিনি, কিন্তু লুনার মনে খেদ ছিল খুব। মা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন সেই কবে, বাবাকেও আজ বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলাম, সেই সঙ্গে বাধামুক্ত হলো লুনার ঘর সাজানোর পথটা।

 পরিশিষ্ট

 এতক্ষণ নিজের লেখা ডায়েরির কয়েকটি পাতা পড়ছিলেন আবীর চৌধুরী। তাঁর চোখের কোণে পানি। এখন তাঁর বয়স পঁচাত্তর। পাঁচ বছর আগে লুনা তাকে ছেড়ে চলে গেছে। আর তাঁর আদরের ছেলে আনন্দ চৌধুরী আজ সকালে তাঁকে রেখে গেল বৃদ্ধাশ্রমে।