লিখনপ্রনালি এবং প্রকাশরীতির সুষ্টতার জন্যে যে কোন ভাষার নিজস্ব বানানরীতি একান্ত অপরিহার্য। আবার, উচ্চারণের সাথে বানানের সামঞ্জস্য থাকাও আবশ্যক। তবে, উচ্চারণ ও বানানে সমতারক্ষা পৃথিবীর কোন ভাষায় সম্ভব হয়নি। কারণ, উচ্চারন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়, অঞ্চলে অঞ্চলে উচ্চারণে ভিন্নতা দেখা দেয়। এরকম একটি পরিবর্তনশীল বিষয়ের সাথে মিল রেখে বানানে যথার্থ পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। এছাড়াও প্রচীন ও মধ্যযুগে লিপিকারেরা ইচ্ছামতো বানা ব্যবহার করতো। তখন বানানের সর্বজনসম্মত কোন মানরুপ ছিল না। ফলে, বাংলা বানানে বিশৃঙ্খলা আর বানান ভিন্নতা শুরুতেই প্রকট হয়ে দেখা দেয়।
উনিশ শতকের প্রারম্ভে, বাংলা গদ্যের উম্মেষগুগে তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যকরলের অনুশাসন অনুযায়ী বাংলা বানান নির্ধারিত হয়। কিন্তু অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব,দেশি ও বিদেশি ও নানা ধরনের মিশ্র শব্দের ক্ষেত্রে বানানের নৈরাজ্য চলতে থাকে। ফলে, বানান নির্ধারিত হলেও বাংলা বানানের সমতাবিধান সম্ভব হয়নি। তাছাড়া, বাংলা ভাষা ক্রমাগত সাধুরীতির নির্মোক ত্যাগ করে চলিতরুপে পরিগ্রহ করতে থাকে। এমনকি অনেক বাষার মতো বাংলা ভাষার লেখ্য রুপও সম্পূর্ন ধ্বনিভিত্তিক নয়। বাংলা বানানের এই াসুবিধা আর সংঙ্গতি দুরীকরনের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।Facebook
তারই অনুরোধে বাংলা বানান সংস্কার এবং বানানরীতি সুনির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সক্রিয় ভূমিকা পালন করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৩৫ সালে রাজশেখর বসুকে সভাপতি এবং চারুচন্দ্র ভট্টাচর্যকে সম্পাদক করে গঠিত বাংলা বানান সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয়। কিন্তু রক্ষণশীল পণ্ডিতগণ ঐ বানান কাঠামোর বিরোধিতা করেন। আবার, কেউ সুনির্দিষ্ট নিয়ম সম্পর্কে ভিন্নমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ - শরৎচন্দ্র ঐ সুপারিশ অনুসারে বানান লিখতে সম্মত হলে এবং বিভিন্ন মহল থেকে উত্থাপিত মতামত ও ভিন্নমত বিবেচনায় নিয়ে সামান্য পরিবর্তন করে ১৯৩৭ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্রালয় 'বাংলা বানানের নিয়ম' পুস্তিকার তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে। এ নিয়ম সর্বতোভাবে মেনে না নিলেও পরবর্তীতে প্রকাশিত সকল অভিধানে তা গ্রহণ করা হয়।
কিন্তু তারপরেও অনেক ক্ষেত্রে বিকল্প বানানের সমস্যা থেকে যায় বিশ্বভারতী ১৯৩৬-৩৭ সালের দিকে 'চলিত ভাষার বানান' এর নিয়ম প্রণয়ন করেছিল। যার সাথে কোন কোন ক্ষেত্রে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বানানের পার্থক্য ছিল। পরে অবশ্য বিশ্বভারতীর বানানের নিয়মের অনেক পরিবর্তন হয়েছিল।Facebook
আশির দশকে আশুনিক মুদ্রণ-প্রযুক্তিকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে বাংলা বানান সংস্কার ও প্রমতিকরণের নতুন উদ্যোগ শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাডেমি ১৯৮৭ সালে এ সংক্রান্ত কিছু সংস্কার প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ১৯৮৮ সালে বাংলা বানারের সমতা বিধারের একটি নীতমালা প্রণয়ন করে এবং ১৯৯২ সালে তা পুস্তিককারে প্রকাশ পায়। ১৯৯২ সালেই বাংলা একাডেমী কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রণীত বানানরীতি এবং বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক গৃতীত বানানরীতির সমন্বয়ে 'প্রমিত বাংলা বানারের নিয়ম' পুস্তিকটি প্রণয়ন করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য মত-পর্থক্য সত্তেও এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সামগ্রিক তৎসম শব্দের বানান মোটামুটি অপরিবর্তিত রেখে এবং অতৎসম শব্দের বানানকে ধ্বনিসংবাদী করে বাংলা বানানের নিয়ম উপস্থাপিত হয়েছে।Facebook
Sunday, August 5, 2012
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
RSS Feed
Twitter
11:19 PM
Amit Das
Thanks
ReplyDeleteএখানে বাংলা বানানের অনেক ভুল আছে। এগুলোর দেকে নজর দেওয়ায় উচিত।
ReplyDeleteবাংলা বানানের সমস্যাটা কীরূপ সেটা স্পষ্ট করে তুলে ধরা উচিত।
ReplyDelete