Wednesday, October 3, 2012


RE: উপন্যাসঃ চোখের বালি।। ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )
১৮
চড়িভাতির দুর্দিনের পরে মহেন্দ্র বিনোদিনীকে আর-এক বার ভালো করিয়া আয়ত্ত করিয়া লইতে উসুক ছিলকিন্তু তাহার পরদিনেই রাজলক্ষ্মী ইনফ্লুয়েঞ্জা-জ্বরে পড়িলেনরোগ গুরুতর নহে, তবু তাহার অসুখ ও দুর্বলতা যথেষ্টবিনোদিনী দিনরাত্রি তাঁহার সেবায় নিযুক্ত হইল

মহেন্দ্র কহিল, “দিনরাত এমন করিয়া খাটিলে শেষকালে তুমিই যে অসুখে পড়িবেমার সেবার জন্যে আমি লোক ঠিক করিয়া দিতেছি

বিহারী কহিল, “মহিনদা, তুমি অত ব্যস্ত হইয়ো নাউনি সেবা করিতেছেন, করিতে দাওএমন করিয়া কি আর কেহ করিতে পারিবে

মহেন্দ্র রোগীর ঘরে ঘনঘন যাতায়াত আরম্ভ করিলএকটা লোক কোনো কাজ করিতেছে না, অথচ কাজের সময় সর্বদাই সঙ্গে লাগিয়া আছে, ইহা কর্মিষ্ঠা বিনোদিনীর পক্ষে অসহ্যসে বিরক্ত হইয়া দুই-তিনবার কহিল, “মহিনবাবু, আপনি এখানে বসিয়া থাকিয়া কী সুবিধা করিতেছেনআপনি যানঅনর্থক কালেজ কামাই করিবেন না

মহেন্দ্র তাহাকে অনুসরণ করে, ইহাতে বিনোদিনীর গর্ব এবং সুখ ছিল, কিন্তু তাই বলিয়া এমনতরো কাঙালপনা, রুগ্‌ণা মাতার শয্যাপার্শ্বেও লুব্ধহৃদয়ে বসিয়া থাকাইহাতে তাহার ধৈর্য থাকিত না, ঘৃণাবোধ হইতকোনো কাজ যখন বিনোদিনীর উপর নির্ভর করে, তখন সে আর-কিছুই মনে রাখে নাযতক্ষণ খাওয়ানো-দাওয়ানো, রোগীর সেবা, ঘরের কাজ প্রয়োজন, ততক্ষণ বিনোদিনীকে কেহ অনবধান দেখে নাইসেও প্রয়োজনের সময় কোনোপ্রকার অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার দেখিতে পারে না

বিহারী অল্পক্ষণের জন্য মাঝে মাঝে রাজলক্ষ্মীর সংবাদ লইতে আসেঘরে ঢুকিয়াই কী দরকার, তাহা সে তখনই বুঝিতে পারেকোথায় একটা-কিছুর অভাব আছে, তাহা তাহার চোখে পড়েমুহূর্তের মধ্যে সমস্ত ঠিক করিয়া দিয়া সে বাহির হইয়া যায়বিনোদিনী মনে বুঝিতে পারিত, বিহারী তাহার শুশ্রূষাকে শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিতেছেসেইজন্য বিহারীর আগমনে সে যেন বিশেষ পুরষ্কার লাভ করিত

মহেন্দ্র নিতান্ত ধিক্‌কারবেগে অত্যন্ত কড়া নিয়মে কালেজে বাহির হইতে লগিলএকে তাহার মেজাজ অত্যন্ত রুক্ষ হইয়া রহিল, তাহার পরে এ কী পরিবর্তনখাবার ঠিক সময়ে হয় না, সইসটা নিরুদ্দেশ হয়, মোজাজোড়ার ছিদ্র ক্রমেই অগ্রসর হইতে থাকেএখন এই-সমস্ত বিশৃঙ্খলায় মহেন্দ্রের পূর্বের ন্যায় আমোদ বোধ হয় নাযখন যেটি দরকার, তখনি সেটি হাতের কাছে সুসজ্জিত পাইবার আরাম কাহাকে বলে, তাহা সে কয়দিন জানিতে পারিয়াছেএক্ষণে তাহার অভাবে, আশার অশিক্ষিত অপটুতায়
মহেন্দ্রের আর কৌতুকবোধ হয় না

চুনি, আমি তোমাকে কতদিন বলিয়াছি, স্নানের আগেই আমার জামায় বোতাম পরাইয়া প্রস্তুত রাখিবে, আর আমার চাপকান-প্যাণ্টলুন ঠিক করিয়া রাখিয়া দিবেএকদিনও তাহা হয় নাস্নানের পর বোতাম পরাইতে আর কাপড় খুঁজিয়া বেড়াইতে আমার দু ঘণ্টা যায়

অনুতপ্ত আশা লজ্জায় ম্লান হইয়া বলে, “আমি বেহারাকে বলিয়া দিয়াছিলাম

বেহারাকে বলিয়া দিয়াছিলে! নিজের হাতে করিতে দোষ কীতোমার দ্বারা যদি কোনো কাজ পাওয়া যায়!

ইহা আশার পক্ষে বজ্রাঘাতএমন ভর্সনা সে কখনো পায় নাইএ জবাব তাহার মুখে বা মনে আসিল না যে, ‘তুমিই তো আমার কর্মশিক্ষার ব্যাঘাত করিয়াছ’-এই ধারণাই তাহার ছিল না যে, গৃহকর্মশিক্ষা নিয়ত অভ্যাস ও অভিজ্ঞতাসাপেক্ষসে মনে করিত, ‘আমার স্বাভাবিক অক্ষমতা ও নির্বুদ্ধিতাবশতই কোনো কাজ ঠিকমতো করিয়া উঠিতে পারি নামহেন্দ্র যখন আত্মবিস্মৃত হইয়া বিনোদিনীর সহিত তুলনা দিয়া আশাকে ধিক্‌কার দিয়াছে, তখন সে তাহা বিনয়ে ও বিনা বিদ্বেষে গ্রহণ করিয়াছে

আশা এক-একবার তাহার রুগ্‌ণা শাশুড়ির ঘরের আশেপাশে ঘুরিয়া বেড়ায়এক-একবার লজ্জিতভাবে ঘরের দ্বারের কাছে আসিয়া দাঁড়ায়সে নিজেকে সংসারের পক্ষে আবশ্যক করিয়া তুলিতে ইচ্ছা করে, সে কাজ দেখাইতে চায়, কিন্তু কেহ তাহার কাজ চাহে নাসে জানে না কেমন করিয়া কাজের মধ্যে প্রবেশ করা যায়, কেমন করিয়া সংসারের মধ্যে স্থান করিয়া লইতে হয়সে নিজের অক্ষমতার সংকোচে বাহিরে বাহিরে ফিরেতাহার কী-একটা মনোবেদনার কথা অন্তরে প্রতিদিন বাড়িতেছে, কিন্তু তাহার সেই অপরিস্ফুট বেদনা, সেই অব্যক্ত আশঙ্কাকে সে স্পষ্ট করিয়া বুঝিতে পারে নাসে অনুভব করে, তাহার চারি দিকের সমস্তই সে যেন নষ্ট করিতেছেকিন্তু কেমন করিয়াই যে তাহা গড়িয়া উঠিয়াছিল এবং কেমন করিয়াই যে তাহা নষ্ট হইতেছে, এবং কেমন করিলে যে তাহার প্রতিকার হইতে পারে তাহা সে জানে নাথাকিয়া থাকিয়া কেবল গলা ছাড়িয়া কাঁদিয়া বলিতে ইচ্ছা করে, ‘আমি অত্যন্ত অযোগ্য, নিতান্ত অক্ষম, আমার মূঢ়তার কোথাও তুলনা নাই

পূর্বে তো আশা ও মহেন্দ্র সুদীর্ঘকালে দুই জনে এক গৃহকোণে বসিয়া কখনো কথা কহিয়া, কখনো কথা না কহিয়া, পরিপূর্ণ সুখে সময় কাটাইয়াছেআজকাল বিনোদিনীর অভাবে আশার সঙ্গে একলা বসিয়া মহেন্দ্রের মুখে কিছুতেই যেন সহজে কথা জোগায় নাএবং কিছু না কহিয়া চুপ করিয়া থাকিতেও তাহার বাধো-বাধো ঠেকে

মহেন্দ্র বেহারাকে জিজ্ঞাসা করিল, “ও চিঠি কাহার

বিহারীবাবুর

কে দিল

বহু-ঠাকুরাণী” (বিনোদিনী)

দেখিবলিয়া চিঠিখানা লইলইচ্ছা হইল ছিঁড়িয়া পড়েদু-চারিবার উলটাপালটা করিয়া নাড়িয়া-চাড়িয়া বেহারার হাতে ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিলযদি চিঠি খুলিত, তবে দেখিত, তাহাতে লেখা আছে, ‘পিসিমা কোনোমতেই সাগু-বার্লি খাইতে চান না, আজ কি তাঁহাকে ডালের ঝোল খাইতে দেওয়া হইবেঔষধপথ্য লইয়া বিনোদিনী মহেন্দ্রকে কখনো কোনো কথা জিজ্ঞাসা করিত না, সে-সম্বন্ধে বিহারীর প্রতিই তাহার নির্ভর

মহেন্দ্র বারান্দায় খানিকক্ষণ পায়চারি করিয়া ঘরে ঢুকিয়া দেখিল, দেয়ালে টাঙানো একটা ছবির দড়ি ছিন্নপ্রায় হওয়াতে ছবিটা বাঁকা হইয়া আছেআশাকে অত্যন্ত ধমক দিয়া কহিল, “তোমার চোখে কিছুই পড়ে না, এমনি করিয়া সমস্ত জিনিস নষ্ট হইয়া যায়দমদমের বাগান হইতে ফুল সংগ্রহ করিয়া যে-তোড়া বিনোদিনী পিতলের ফুলদানিতে সাজাইয়া রাখিয়াছিল, আজও তাহা শুষ্ক অবস্থায় তেমনিভাবে আছে; অন্যদিন মহেন্দ্র এ-সমস্ত লক্ষ্যই করে নাআজ তাহা চোখে পড়িলকহিল, “বিনোদিনী আসিয়া না ফেলিয়া দিলে, ও আর ফেলাই হইবে নাবলিয়া ফুলসুদ্ধ ফুলদানি বাহিরে ছুঁড়িয়া ফেলিল, তাহা ঠংঠং শব্দে সিঁড়ি দিয়া গড়াইয়া চলিলকেন আশা আমার মনের মতো হইতেছে না, কেন সে আমার মনের মতো কাজ করিতেছে না, কেন তাহার স্বভাবগত শৈথিল্য ও দুর্বলতায় সে আমাকে দাম্পত্যের পথে দৃঢ়ভাবে ধরিয়া রাখিতেছে না, সর্বদা আমাকে বিক্ষিপ্ত করিয়া দিতেছে’– এই কথা মহেন্দ্র মনে মনে আন্দোলন করিতে করিতে হঠা দেখিল, আশার মুখ পাংশুবর্ণ হইয়া গেছে, সে খাটের থাম ধরিয়া আছে, তাহার ঠোঁট-দুটি কাঁপিতেছেকাঁপিতে কাঁপিতে সে হঠা বেগে পাশের ঘর দিয়া চলিয়া গেল

মহেন্দ্র তখন ধীরে ধীরে গিয়া ফুলদানিটা কুড়াইয়া আনিয়া রাখিলঘরের কোণে তাহার পড়িবার টেবিল ছিলচৌকিতে বসিয়া সেই টেবিলটার উপর হাতের মধ্যে মাথা রাখিয়া অনেকক্ষণ পড়িয়া রহিল

সন্ধ্যার পর ঘরে আলো দিয়া গেল, কিন্তু আশা আসিল নামহেন্দ্র দ্রুতপদে ছাদের উপর পায়চারি করিয়া বেড়াইতে লাগিলরাত্রি নটা বাজিল, মহেন্দ্রদের লোকবিরল গৃহ রাত-দুপুরের মতো নিস্তব্ধ হইয়া গেলতবু আশা আসিল নামহেন্দ্র তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইলআশা সংকুচিত পদে আসিয়া ছাদের প্রবেশদ্বারের কাছে দাঁড়াইয়া রহিলমহেন্দ্র কাছে আসিয়া তাহাকে বুকে টানিয়া লইলমুহূর্তের মধ্যে স্বামীর বুকের উপর আশার কান্না ফাটিয়া পড়িলসে আর থামিতে পারে না, তাহার চোখের জল আর ফুরায় না, কান্নার শব্দ গলা ছাড়িয়া বাহির হইতে চায়, সে আর চাপা থাকে নামহেন্দ্র তাহাকে বক্ষে বদ্ধ করিয়া কেশচুম্বন করিলনিঃশব্দ আকাশে তারাগুলি নিস্তব্ধ হইয়া চাহিয়া রহিল

রাত্রে বিছানায় বসিয়া মহেন্দ্র কহিল, “কালেজে আমাদের নাইট-ডিউটি অধিক পড়িয়াছে, অতএব এখন কিছুকাল আমাকে কালেজের কাছেই বাসা করিয়া থাকিতে হইবে

আশা ভাবিল, ‘এখনো কি রাগ আছেআমার উপর বিরক্ত হইয়া চলিয়া যাইতেছেন? নিজের নির্গুণতায় আমি স্বামীকে ঘর হইতে বিদায় করিয়া দিলাম? আমার তো মরা ভালো ছিল

কিন্তু মহেন্দ্রের ব্যবহারে রাগের লক্ষণ কিছুই দেখা গেল নাসে অনেকক্ষণ কিছু না বলিয়া আশার মুখ বুকের উপর রাখিল এবং বারংবার অঙ্গুলি দিয়া তাহার চুল চিরিতে চিরিতে তাহার খোঁপা শিথিল করিয়া দিলপূর্বে আদরের দিনে মহেন্দ্র এমন করিয়া আশার বাঁধা চুল খুলিয়া দিতআশা তাহাতে আপত্তি করিতআজ আর সে তাহাতে কোনো আপত্তি না করিয়া পুলকে বিহ্বল হইয়া চুপ করিয়া রহিলহঠা এক সময় তাহার ললাটের উপর অশ্রুবিন্দু পড়িল, এবং মহেন্দ্র তাহার মুখ তুলিয়া ধরিয়া স্নেহরুদ্ধ স্বরে ডাকিল, “চুনিআশা কথায় তাহার কোনো উত্তর না দিয়া দুই কোমল হস্তে মহেন্দ্রকে চাপিয়া ধরিলমহেন্দ্র কহিল, “অপরাধ করিয়াছি, আমাকে মাপ করো

আশা তাহার কুসুম-সুকুমার করপল্লব মহেন্দ্রের মুখের উপর চাপা দিয়া কহিল, “না, না, অমন কথা বলিয়ো নাতুমি কোনো অপরাধ কর নাইসকল দোষ আমারআমাকে তোমার দাসীর মতো শাসন করোআমাকে তোমার চরণাশ্রয়ের যোগ্য করিয়া লও

বিদায়ের প্রভাতে শয্যাত্যাগ করিবার সময় মহেন্দ্র কহিল, “চুনি, আমার রত্ন, তোমাকে আমার হৃদয়ে সকলের উপরে ধারণ করিয়া রাখিব, সেখানে কেহ তোমাকে ছাড়াইয়া যাইতে পারিবে না

তখন আশা দৃঢ়চিত্তে সর্বপ্রকার ত্যাগস্বীকারে প্রস্তুত হইয়া স্বামীর নিকট নিজের একটিমাত্র ক্ষুদ্র দাবি দাখিল করিলকহিল, “তুমি আমাকে রোজ একখানি করিয়া চিঠি দিবে?”

মহেন্দ্র কহিল, “তুমিও দিবে?”

আশা কহিল, “আমি কি লিখিতে জানি

মহেন্দ্র তাহার কানের কাছে অলকগুচ্ছ টানিয়া দিয়া কহিল, “তুমি অক্ষয়কুমার দত্তের চেয়ে ভালো লিখিতে পারচারুপাঠ যাহাকে বলে

আশা কহিল, “যাও, আমাকে আর ঠাট্টা করিয়ো না

যাইবার পূর্বে আশা যথাসাধ্য নিজের হাতে মহেন্দ্রের পোর্টম্যাণ্টো সাজাইতে বসিলমহেন্দ্রের মোটা মোটা শীতের কাপড় ঠিকমতো ভাঁজ করা কঠিন, বাক্সে ধরানো শক্তউভয়ে মিলিয়া কোনোমতে চাপাচাপি ঠাসাঠুসি করিয়া, যাহা এক বাক্সে ধরিত, তাহাতে দুই বাক্স বোঝাই করিয়া তুলিলতবু যাহা ভুলক্রমে বাকি রহিল, তাহাতে আরো অনেকগুলি স্বতন্ত্র পুঁটুলির সৃষ্টি হইলইহা লইয়া আশা যদিও বার বার লজ্জাবোধ করিল, তবু তাহাদের কাড়াকাড়ি, কৌতুক ও পরস্পরের প্রতি সহাস্য দোষারোপে পূর্বেকার আনন্দের দিন ফিরিয়া আসিলএ যে বিদায়ের আয়োজন হইতেছে, তাহা আশা ক্ষণকালের জন্য ভুলিয়া গেলসহিস দশবার গাড়ি তৈয়ারির কথা মহেন্দ্রকে স্মরণ করাইয়া দিল, মহেন্দ্র কানে তুলিল নাঅবশেষে বিরক্ত হইয়া বলিল, “ঘোড়া খুলিয়া দাও

সকাল ক্রমে বিকাল হইয়া গেল, বিকাল সন্ধ্যা হয়তখন স্বাস্থ্যপালন করিতে পরস্পরকে সতর্ক করিয়া দিয়া এবং নিয়মিত চিঠি লেখা সম্বন্ধে বারংবার প্রতিশ্রুত করাইয়া লইয়া ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পরস্পরের বিচ্ছেদ হইল

রাজলক্ষ্মী আজ দুইদিন হইল উঠিয়া বসিয়াছেনসন্ধ্যাবেলায় গায়ে মোটা কাপড় মুড়ি দিয়া বিনোদিনীর সঙ্গে তাস খেলিতেছেনআজ তাঁহার শরীরে কোনো গ্লানি নাইমহেন্দ্র ঘরে প্রবেশ করিয়া বিনোদিনীর দিকে একেবারেই চাহিল নামাকে কহিল, “মা, কালেজে আমার রাত্রের কাজ পড়িয়াছে, এখানে থাকিয়া সুবিধা হয় নাকালেজের কাছে বাসা লইয়াছিসেখানে আজ হইতে থাকিব

রাজলক্ষ্মী মনে মনে অভিমান করিয়া কহিলেন, “তা যাওপড়ার ক্ষতি হইলে কেমন করিয়া থাকিবে

যদিও তাঁহার রোগ সারিয়াছে, তবু মহেন্দ্র যাইবে শুনিয়া তখনি তিনি নিজেকে অত্যন্ত রুগ্‌ণ ও দুর্বল বলিয়া কল্পনা করিলেন; বিনোদিনীকে বলিলেন, “দাও তো বাছা, বালিশটা আগাইয়া দাওবলিয়া বালিশ অবলম্বন করিয়া শুইলেন, বিনোদিনী আস্তে আস্তে তাঁহার গায়ে হাত বুলাইয়া দিতে লাগিল

মহেন্দ্র একবার মার কপালে হাত দিয়া দেখিল, তাঁহার নাড়ী পরীক্ষা করিলরাজলক্ষ্মী হাত ছাড়াইয়া লইয়া কহিলেন, “নাড়ী দেখিয়া তো ভারি বোঝা যায়তোর আর ভাবিতে হইবে না, আমি বেশ আছিবলিয়া যন্ত দুর্বলভাবে পাশ ফিরিয়া শুইলেন

মহেন্দ্র বিনোদিনীকে কোনোপ্রকার বিদায়সম্ভাষণ না করিয়া রাজলক্ষ্মীকে প্রণাম করিয়া চলিয়া গেল 

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

Thnaks