Wednesday, October 3, 2012


নবম পরিচ্ছেদ : দেবনিকেতনে
কণ্ব অলং রুদিতেন; স্থিরা ভব, ইতঃ পন্থানমালোকয়
শকুন্তলা
প্রাতে অধিকারী নবকুমারের নিকট আসিলেনদেখিলেন, এখনও নবকুমার শয়ন করেন নাইজিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন কি কর্ত্তব্য?”
নবকুমার কহিলেন, “আজি হইতে কপালকুণ্ডলা আমার ধর্ম্মপত্নীইহার জন্য সংসার ত্যাগ করিতে হয়, তাহাও করিবকে কন্যা সম্প্রদান করিবে?”
ঘটকচূড়ামণির মুখ হর্ষোফুল্ল হইলমনে মনে ভাবিলেন, “এত দিনে জগদম্বার কৃপায় আমার কপালিনীর বুঝি গতি হইলপ্রকাশ্যে বলিলেন, “আমি সম্প্রদান করিবঅধিকারী নিজ শয়নকক্ষমধ্যে পুনঃপ্রবেশ করিলেনএকটি খুঙ্গীর মধ্যে কয়েক খণ্ড অতি জীর্ণ তালপত্র ছিলতাহাতে তাঁহার তিথি নক্ষত্রাদি নির্দ্দিষ্ট থাকিতসমুদায় সবিশেষ সমালোচনা করিয়া আসিয়া কহিলেন, “আজি যদিও বৈবাহিক দিন নহে তথাচ বিবাহে কোন বিঘ্ন নাইগোধূলিলগ্নে কন্যা সম্প্রদান করিবতুমি অদ্য উপবাস করিয়া থাকিবে মাত্রকৌলিক আচরণসকল বাটী গিয়া করাইওএক দিনের জন্য তোমাদিগকে লুকাইয়া রাখিতে পারি, এমন স্থান আছেআজি যদি তিনি আসেন, তবে তোমাদিগের সন্ধান পাইবেন নাপরে বিবাহান্তে কালি প্রাতে সপত্নীক বাটী যাইও
নবকুমার ইহাতে সম্মত হইলেনএ অবস্থায় যত দূর সম্ভবে, তত দূর যথাশাস্ত্র কার্য্য হইলগোধূলিলগ্নে নবকুমারের সহিত কাপালিকপালিতা সন্ন্যাসিনীর বিবাহ হইল
কাপালিকের কোন সংবাদ নাইপরদিন প্রত্যূষে তিন জনেযাত্রার উদ্যোগ করিতে লাগিলেনঅধিকারী মেদিনীপুরের পথ পর্য্যন্ত তাঁহাদিগকে রাখিয়া আসিবেন
যাত্রাকালে কপালকুণ্ডলা কালীপ্রণামার্থ গেলেনভক্তিভাবে প্রণাম করিয়া, পুষ্পপাত্র হইতে একটি অভিন্ন বিল্বপত্র প্রতিমার পাদোপরি স্থাপিত করিয়া তপ্রতি নিরীক্ষণ করিয়া রহিলেনপত্রটি পড়িয়া গেল
কপালকুণ্ডলা নিতান্ত ভক্তিপরায়ণাবিল্বদল প্রতিমাচরণচ্যুত হইল দেখিয়া ভীত হইলেন; – এবং অধিকারীকে সংবাদ দিলেনঅধিকারীও বিষণ্ণ হইলেনকহিলেন,
এখন নিরুপায়পতিমাত্র তোমার ধর্ম্মপতি শ্মশানে গেলে তোমাকে সঙ্গে সঙ্গে যাইতে হইবেঅতএব নিঃশব্দে চল
সকলে নিঃশব্দে চলিলেনঅনেক বেলা হইলে মেদিনীপুরের পথে আসিয়া উপস্থিত হইলেনতখন অধিকারী বিদায় হইলেনকপালকুণ্ডলা কাঁদিতে লাগিলেনপৃথিবীতে যে জন তাঁহার একমাত্র সুহৃদ, সে বিদায় হইতেছে
অধিকারীও কাঁদিতে লাগিলেনচক্ষের জল মুছাইয়া কপালকুণ্ডলার কানে কানে কহিলেন, “মা! তুই জানিস্‌, পরমেশ্বরীর প্রসাদে তোর সন্তানের অর্থের অভাব নাইহিজলীর ছোট বড় সকলেই তাঁহার পূজা দেয়তোর কাপড়ে যাহা বাঁধিয়া দিয়াছি, তাহা তোর স্বামীর নিকট দিয়া তোকে পাল্কী করিয়া দিতে বলিস্‌সন্তান বলিয়া মনে করিস্‌
অধিকারী এই বলিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে গেলেনকপালকুণ্ডলাও কাঁদিতে কাঁদিতে চলিলেন

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment

Thnaks